ফিতনার দুনিয়া

আসসালামু আলাইকুম, আমি মোরশেদুর রহমান চৌধুরী ।

আজ আমি কিছুকথা বলতে চাই।অনেকদিন দমিয়ে থেকেও আর ধরে রাখতে পারলাম না।আসলে, সরাসরি বললে আমরা এমন এক যামানার যাত্রী যেখানে আপনি ফিতনার অভাব অনুভব করবেনই না।ফিতনা আর ফিতনা।অশ্লীলতার সর্বনিম্ন, সর্বহীন,নিচু মনস্তত্ত্ব নিয়ে আমরা বেচেঁ আছি।হ্যা আমরা আছি।আমরা ধ্বংস হচ্ছি।আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি।হ্যা,হ্যা আমাদের বিবেক মরে যাচ্ছে।আমরা অনুভব করছি না,করতে পাচ্ছি না,করার চেস্টাও করছি না।হাতের মোবাইলের গর্তে ডুকছি আর সব ভুলে যাচ্ছি।প্লিজ,আমার কথা শুনুন।আমি আজ সরাসরি বাস্তব কথা বলব।কোথায় আছি আমরা বলুন আমাকে?নিজেকে প্রশ্ন করুন??আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অবস্থা কল্পনা করলে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে।কারন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নেই বললেই চলে।তাহলে বলছি ইন্টারনেটের কথা ; যা কিনা ফিতনার ভান্ডার বললেও অনেক কম হয়।ইন্টারনেটের ভালো দিক অনেক।কিন্তু খারাপ দিক অপরিসীম। মানে যদি সহজে বলি পুরো ইন্টারনেট জগতের ৮০-৯০% হচ্ছে খারাপ অংশ।তারপর বলছি মিডিয়া জগতের কথা।আমি মিডিয়াজগৎ বলতে শুধু যে ফেইসবুক, ইউটিউবের কথা বলছি তা নয়।আমি পুরো মিডিয়াওয়াল্ডের কথা বলছি।মিডিয়া জগতের বর্তমান অবস্থা যে কত নিকৃষ্টতম এবং অশ্লীলতার চরম পর্যায়ে তা প্রকাশ করার উপযোগী নয়।মুভি এবং সিরিজের কথা বাদই দিলাম।যেসব কন্টেন্ট প্রাপ্তবয়স্কদের দেখার উপযুক্ত সেগুলি শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।আরও শুনুন,মাত্র শুরু করলাম....আপনি বলতে পারেন যে আমি আমার শিশুদেরকে এগুলি থেকে দূরে রাখব,সে শুধু ইউটিউবে কার্টুন দেখে বা গেমস খেলে।ইউটিউব যে শিশুর জন্যে নিরাপদ আপনি কী নিশ্চয়তা দিতে পারবেন?আর ইউটিউবে কার্টুনের ভিতরে যেসব এড দেখায় সেগুলি যে সব নিরাপদ তার নিশ্চয়তা দিতে পারবেন?আপনার সন্তান যে মোবাইলে গেমস্ খেলে ধরলাম তা সাধারন।কিন্তু বর্তমানে প্রায় ৯০% গেমস্ খেলতে হয় নেট ব্যাবহার করে।আর যেসব গেমস্ নেট ব্যাবহার করে খেলতে হয় সেসব গেমসের ভিতর এড তো থাকছেই মাস্ট।আর এডগুলো যে সব নিরাপদ সে নিশ্চয়তা দিতে পারবেন?

সোজাসুজি বলতে গেলে এখন কাউকে ফিতনায় যেতে হলে কস্ট করতে হয় না।ফিতনা এসেই তাকে আহ্বান করে।এখন বলবেন দুর আমার সন্তানদের মোবাইল কিচ্ছু দিব না।সবকিছু থেকে তাকে একদম নিরাপদ রাখব।এখন আপনার নিরাপদ সন্তানকে তার বন্ধু বা আত্মীয় বা সমবয়সী সহপাঠী এমনভাবে মোবাইলের বা ইন্টারনেটের লোভ জাগিয়ে দিবে।কারন তাদের কাজই এটা ।তখন আপনি কী করবেন। বাধ্য হয়ে তখন আপনাার ফোনই দিয়ে দিবেন।আচ্ছা অনেক্ষণ বকবক করলাম ফোন নিয়ে। এবার আরও সহজে বলছি, বর্তমানে তো এমন কোনো মানুষ নেই যে কিনা মুভি বা সিরিজ অথবা ফ্লিম দেখেনা তাইনা?..এখন আপনারা তো জানেনই আজকের মুভি ফ্লীমগুলি দেখলে সুস্থ সংস্কৃতির কোন চিহ্ন তো নেই আরও নোংরা সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ।দুরে যাচ্ছি না,আমাদের প্রতিবেশী ভারতের ফ্লীমের অবস্থা জানেন আশা করি।তা অশ্লীলতার শীর্ষে বললেও অনেকটা কমই হবে বৈকি।কারন মাত্র একটা মুভি আপনার ইমানকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে সর্বোচ্চ যথেষ্ট। আর,আমাদের দেশের প্রায় ৯৫% মানুষ ও শিশুরা ইন্ডিয়ান ফ্লিমের ভক্ত। মানে, আমি কীভাবে বুজাবো আপনাদের ভাষা খুজে পাচ্ছি না।আমরা আজ কোথায় আছি তা বলার বাইরে।

তবুও আমরা বলি আমরা মুসলিম।আমাদের লজ্জা থাকা উচিত।আমরা কীসের মুসলিম? আমরা যদিও উপরে পান্জাবি ,পাগড়ি পরে মুসলিমত্বের শো দেখাই।ভিতরে ভিতরে যে কতটুকু মুসলিম আমরা সেটা ভালো করেই জানি।কড়ি কড়ি অর্থ ব্যায় করি মসজিদের জন্য।কেউ তুর্কি ডিজাইন করে,কেউ মোগল ডিজাইন করে আবার কেউ জাপানি ডিজাইন করে।কই আমিতো দেখি এসব ব্যায়বহুল মসজিদে নামাজের সময় এক কাতার পুরন করতেই কস্ট হয়ে যায়।ইহুদীরা আমাদের কী চ্যালেঞ্জ করেছে কী জানেন?,তারা বলেছে যখন দেখা যাবে যে মসজিদের ফজরের সময়ের মুসল্লিদের সংখ্যা ঈদের নামাজের মুসল্লিসংখ্যার সমান হবে তখন বুজব যে তোরা আসলেই মুসলিম।আমাদের লজ্জা থাকা উচিত। ৪৮°c তাপমাত্রা সহ্য না করতে পেরে পুরো মসজিদে এ.সি দিয়ে ভরিয়ে ফেলি, কিন্তু আমার নবি মরুর দেশে ১৫০-২০০°c তাপমাত্রা সহ্য করে যে নামাজ পড়েছেন তখন কীভাবে পড়েছেন।আমাদের লজ্জা থাকা উচিত।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উদ্ভবের পূর্বে মানুষ লক্ষ কোটিগুনে শান্তিতে ছিল,শালীন ছিল,মানুষের মাঝে সম্প্রীতি ছিল।কিছু অভিশপ্ত ব্যাক্তিবর্গ এই অভিশাপটি বিশ্বে এনে দিয়ে আমাদের জীবনকে অভিশপ্ত করে তুলেছে।আমরা এখন এমনভাবে আটকে গেছি এই অভিশাপের ভিতর,যে কোন কূলই পাচ্ছিনা রেহাই পাওয়ার।

আরেকটি দুঃসংবাদ আছে । দুঃসংংবাদটি হচ্ছে কিছু সময়ের মধ্যেই ফিতনার এক বিশাল বিপ্লব হতে চলেছে।আসছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) । যেই প্রযুক্তি ব্যাবহার করে একজন মানুষ তার চোখের সামনে কৃত্রিম আরেকটি জগৎ তৈরী করতে পারবে এবং সেই জগতের সবকিছু অনুভব পর্যন্ত করতে পারবে। বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন যে, একবার এই প্রযুক্তি যদি বিশ্বে সবার নিকট পৌঁছে যায়।তবে তারা দিনের পুরোসময় কাজকর্ম ফেলে রেখে কৃত্রিম জগতেই ঘুরে বেড়াবে,যা ইচ্ছা তাই করবে।এমনিতেই মোবাইল কম্পিউটারের কারনে অধিকাংশ মুসলিম নামাজ,রোযার কথা ভুলেই গেছে।আর যদি একবার এই প্রযুক্তি সবার হাতে চলে আসে তাহলে তাঁরা আল্লাহর কথাই না ভুলে যায়!! তখন তারা ভাববে যে, মানুষই তো নিজের জগৎ নিজে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করতে পারে,তবে সৃ‌ষ্টিকর্তার কী দরকার। হে মুসলিম শুধু অপেক্ষা করো সামনে কী হয়..।

আজকে শুধূ ফিতনার কথাই বলব, আরও শুনুন,সমকামিতা কী জানেন? জানলে ভালো,না জানলে শুনুন।কেন শুনতে বলছি কারন বাংলাদেশ কিছুদিন পরে এই পরিস্থিতির সম্মূখীন হতে যাচ্ছে।সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তায়ালা আদম ও হাওয়া দুইজন বিপরীত লিঙ্গকে সৃস্টি করেছেন।যারা পরিবার গড়ে তুলে আজও এই প্রজন্মের ধারা অব্যাহত রেখেছে ।প্রত্যেকটি প্রানীর প্রত্যেকটি প্রজাতির ক্ষেত্রে একই রকমভাবে দুটি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন হয়ে তাদের নতুন বংশ গঠিত হয়।আর এই নিয়মটি পাল্টিয়ে নতুন নীতি আরোপ করা হয়েছে যে পুরুষ পুরুষকে বিয়ে করবে আবার মহিলা মহিলাকে।নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা কুরআনের একটি আয়াতে বলেছিলেন যে মানুষ খারাপ হলে পশুর সমান হয়ে যায়।তারপরের আয়াতে বলেন তাঁর চেয়েও নিকৃষ্ট। আর এখন বোঝা যায় যে কত নিকৃষ্ট, কত খারাপ,কত হীনমম্ম মনমানসীকতার হলে একজন মানুষ এই কাজটি করতে পারে।এরপর আরও কত যে উন্নত নীতি পশ্চিমা দেশগুলিতে তৈরী হয়েছে তা এখানে লিখারই উপযুক্ত নয়।বলতেও লজ্জা লাগে,বিবেকে বাধেঁ যে মানুষ কত নিচে নামতে পারে। 

কিছুদিন আগেও কোন স্থানে কেউ বিপদে পড়লে অন্যরা দৌড়ে গিয়ে তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত।আরও এখন সাহায্য তো করেই না বরং দাড়িয়ে দাড়িয়ে মোবাইল দিয়ে ভিডিও দেখায় এবং বলে যে "উনি বিপদে পড়েছেন দেখুন, আমার চ্যানেলটি শেয়ার করুন"।তাহলে এটাই কী প্রযুক্তি উন্নতি !! 

আমরা ভাবছি দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে ভয়ংকর ফিতনা আর নেই।তাই আমরা দাজ্জালের ফিতনা সম্পর্কে সচেতন করছি সকলকে। কিন্তু বর্তমান দুনিয়ার ফিতনার কথা যদি বলি তাহলে দাজ্জাল নিজেও ভয় পেয়ে যাবে।কিন্তু ফিতনার এই খবর তো রাখিই না,রাখার চেষ্টাও করি না। আমার কথা বিশ্বাস না হলে বর্তমান দুনিয়ায় ঘটিত ফিতনাসমূহ লক্ষ্য করে মিলিয়ে দেখুন।

আসলে পানি যদি মাটির নিচ থেকে উঠে। তবে মাটি ঢেলে চাপা দিয়ে সেই উৎস বন্ধ করা যায়।আর যদি পানি বৃষ্টি হয়ে আকাশ থেকেও পড়ে,সুনামি হয়ে সাগর থেকেও আসে, মাটির নিচ হতেও উঠে তাহলে আপনি কোন উৎস বন্ধ করবেন।বর্তমানে ফিতনার অবস্থা ঠিক এমনই উৎসহীন ।যদি বলি আপনি সচেতন হন তবেও বিন্দুমাত্র লাভ নেই কারন যতই সচেতন হন না কেন অচেতন দুনিয়ায় একদিন আপনিও অচেতন হতে বাধ্য হবেন।

আমার অনেক কথা জমে আছে,কিন্তু সময়ই পাই না।যাই হোক আমি আপনি সবাই পাপী।মরব তো অবশ্যই একদিন ।কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী অভিশাপ রেখে যাচ্ছি, সে সম্পর্কে তাদের সচেতন করেই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিব  ইনশাল্লাহ..